বাংলা পেডাগগি
ভাষার দক্ষতা (Language Skills)
Bengali Pedagogy Language Skills |
প্রাইমারি টেট (WB Primary TET ) বা আপার প্রাইমারি টেট (WB Primary TET) বা CTET পরীক্ষায় বাংলা বিষয়টি থেকে মোট ৩০ নম্বর বরাদ্দ থাকে। এই ৩০ নম্বরের মধ্যে ১৫ নম্বর বাংলা ব্যাকরণ এবং বাকি ১৫ নম্বর বাংলা পেডাগগি (Bengali Pedagogy)থেকে প্রশ্নের মান বরাদ্দ আছে।
এই পাতায় আমরা বাংলা পেডাগগি থেকে ভাষার দক্ষতার উপর আলোচনা সহ কিছু প্রশ্ন ও উত্তর শেয়ার করছি। মনোযোগ দিয়ে নিচের বাংলা পেডাগগি পড়লে, আশা করি আসন্ন পরীক্ষায় কেমন প্রশ্ন আসতে পারে , সে বিষয়ে একটি ধারণা তৈরি হবে।
Bengali Pedagogy : ভাষার দক্ষতা (Language Skills)
ভাষার ব্যবহারে দক্ষতা বৃদ্ধি : (বিষয়টা কি/কি করণীয়)
আমাদের ভারতের সংবিধানে ভারতীয়দের ‘মৌলিক অধিকার’ (Fundamental rights) প্রসঙ্গে যে ক’টি বিষয় স্বীকৃত তার অন্যতম হলো—বাক্স্বাধীনতা (right to speak)। বস্তুত এই কথা বলার অধিকার পৃথিবীর যে কোনো জনকল্যাণকামী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের অন্যতম প্রধান মৌলিক চরিত্র। ফলে বোঝাই যাচ্ছে চিন্তাশীল, বুদ্ধিমান মানুষ তার বৌদ্ধিক সত্তার বিকাশে সবার আগে যাকে আশ্রয় করে তার নাম কথা বা বাক্ বা ভাষা (language)।
রাজনৈতিক মতামত ছাড়াও বাণিজ্যিক কারণ, দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহারিক চাহিদার উদ্দেশ্যেও ভাষাই প্রধান মাধ্যম। এই ভাষা শুধু বলার নয়, লেখাতেও সমানভাবে প্রযোজ্য। বস্তুত দূরদর্শন, রেডিও, পত্র-পত্রিকা, চিঠিপত্র, সাহিত্যরচনা, সঙ্গীত সর্বত্রই ভাষার অবাধ বিচরণ। বলতে পারি সমাজ ও সভ্যতার সুসম্পর্কটি গড়ে উঠেছে ভাষার বিনিময় মাধ্যমে। অতএব ভাষা না শিখলে চলে না।
সেক্ষেত্রে যা যা করণীয় তা হল—
(১) স্বাধীনভাবে কিছু ভাবতে শেখা। তারপর তাকে বলতে আর লিখতে হবে।
(২) বিতর্ক (debate)—বিষয়ে আগ্রহ বাড়াতে হবে।
(৩) সাহিত্যগ্রন্থ ও ব্যাকরণ বই পড়তে শিখতে হবে।
(৪) অভিনয়, গান, আবৃত্তি করা শিখতে হবে।
(৫) জোরে পড়তে পড়তে উচ্চারণ আর অর্থযতি ঠিক করতে হবে।
(৬) লেখার আগ্রহ বাড়াতে হবে।
মনে রাখতে হবে আমাদের জাতীয় সত্তা কিন্তু ভাষা-র মধ্যেই নিহিত। ভারতে প্রথম ভাষাভিত্তিক রাজ্য অন্ধ্রপ্রদেশ। আর বাংলাদেশের জন্মও ঐ ভাষাপ্রীতি থেকেই।
ভাষার মূল উপকরণ হল ধ্বনি। ধ্বনি হল -কোনো ভাষার উচ্চারিত শব্দকে বিশ্লেষণ করলে যা পাওয়া যায়।
সেক্ষেত্রে ধ্বনিতত্ত্বের মূল আলোচ্য বিষয়গুলি হল:
(১) উচ্চারণতন্ত্র (Phonetics),
(২) ভদ্রসমাজে স্বীকৃত উচ্চারণরীতি (Orthoepy),
(৩) বানান বা যথাযথ বর্ণবিন্যাসতত্ত্ব (Orthography)
(8) শব্দের অন্তর্গত ধ্বনির পারস্পরিক প্রভাব
ও প্রতিক্রিয়া (phonology),
(৫) যতি বিষয়ক নিয়ম (Punctuation) এবং
(৬) ছন্দ (Prosiody)।
ধ্বনির পরিবর্তনের কারণগুলিকে নানা ভাষাতাত্তিক নানা দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে, বিশ্লেষণ করেছেন। ফলে এই ব্যাপারে ঐকমত্য আশা করা যায় না। তবে এটাই সর্বজনস্বীকৃত সিদ্ধান্ত যে, প্রধানত দুটি কারণেই ধ্বনির পরিবর্তন সাধিত হতে পারে—
একটি বাহ্য, অন্যটি আভ্যন্তর। বাহ্য পরিবর্তনগুলোর মধ্যে রয়েছে রাজনৈতিক, ধর্মীয় বা সাংস্কৃতিক অবস্থা, বিশেষত ভৌগোলিক পরিবেশ ও ভিন্ন ভাষাসম্প্রদায়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সংস্রব।
অভ্যন্তর কারণগুলোর দুটো স্থূলভাগ এই রকম – (১) বহিরঙ্গ বা শারীরিক কারণ (Physiological) এবং মানসিক (Psychological)। জিহ্বা জড়তা, শ্রোতার বধিরতা, পরিচিত কোনো ভাষার ধ্বনির প্রভাব, ব্যক্তি বিশেষের উচ্চারণের অনুকরণ প্রভৃতিকে শারীরিক বা বহিরঙ্গ কারণ বলে ব্যাখ্যা করা চলে।
ভাষাশিক্ষকের পক্ষে ধ্বনিতত্ত্বের জ্ঞান অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
কারণ ঃ
(i) মাধ্যমিক স্তরে প্রতিটি শিক্ষায়তনে প্রতিটি ছাত্রকে বাংলা বর্ণমালা সম্পর্কে স্পষ্টভাবে অবহিত করাতে হবে। ছাত্ররা যাতে নির্ভুলভাবে স্বরবর্ণ ও ব্যঞ্জনবর্ণ ক্রমানুসারে লিখতে পারে, সেদিকে লক্ষ্য দিতে হবে। যুক্ত ব্যঞ্জনগুলিকেও পরিচিত করাতে হবে।
(ii) বর্ণমালার বর্ণগুলির সঠিক উচ্চারণ আয়ত্ত করা ঃ
যেমন ঃ বর্গীয় ‘ব’ -এর উদাহরণ ঃ বুদবুদ, কদম্ব, উদ্বুদ্ধ, দিগ্বিজয়।
অন্তস্থ ‘ব’ –এর উদাহরণ : বিদ্বান, তন্বী, ধ্বনি, দ্বিতীয়। বর্গীয় ‘ব’ –ফলার ধ্বনি উচ্চারণ করতে হয়, আর অন্তস্থ’ ‘ব’ -ফলার ধ্বনি অনুচ্চারিত থাকে। ‘ব’ -ফলার ধ্বনি ইংরেজি ‘b’ -এর মতো, আর অন্তস্থ ‘ব’ ধ্বনি ইংরেজি ‘w’ -এর মতো।
(iii) বাংলা ভাষার একটি নিজস্ব উচ্চারণ বৈশিষ্ট্য আছে। সেটি হল শব্দের আদিতে ঝোঁক থাকার ফলে শব্দের প্রথম অক্ষরে শ্বাসঘাত পড়ে ও দ্বিমাত্রিকতা প্রাপ্ত হয়। শব্দের আদিতে শ্বাসাঘাত ও দ্বিমাত্রিকতা থাকায় শব্দের শেষের দিকে বায়ুর স্বল্পতা দেখা দেয়। এর ফলে শব্দান্তে মাত্রাহীনতা দেখা দেয় এবং শব্দের অন্ত্যস্থিত ব্যঞ্জনবর্ণ স্বরবর্ণ ছাড়াই উচ্চারিত হয় ।
যেমন ঃ রাম-রাম্ ; ফল-ফল্ প্রভৃতি। অথচ সব স্থানে হসস্ত চিহ্ন দেওয়া প্রয়োজন হয় না। এটি জানা খুব দরকারি।
(iv) যতিচিহ্ন বা বিরতিচিহ্ন শুধু ভাষার গতিকে সুনিয়ন্ত্রিত ও সার্থক করে না, উচ্চারণকে সুন্দর ও অর্থবহ করে তোলে। গদ্যে বা পদ্যে (বিশেষত অমিত্রাক্ষর ছন্দের ক্ষেত্রে) যেখানে যে যতিচিহ্নের প্রয়োগ এসেছে, তার উপযুক্ত কারণসহ ছাত্রদের
বুঝিয়ে দিতে হবে।
(v) কাব্যপাঠে ছন্দের বিশেষ ভূমিকা আছে। মূল তিন প্রকার যে বাংলা ছন্দ রয়েছে তা শিক্ষকদের কাছে ছাত্রদের জেনে নিতে হবে। তাতে কাব্যজ্ঞান আরো স্বচ্ছ হয়ে উঠবে।
এছাড়া বাংলা ব্যাকরণ শিক্ষাদানের প্রয়োজনীয়তাও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়।
.
যেমন-
(i) ব্যাকরণের জ্ঞান ভাষাকে শুদ্ধভাবে প্রয়োগ করতে সাহায্য করে।
(ii) উপযুক্ত শব্দ প্রয়োগে সাহায্য করে।
(iii) ণত্ব, ষত্ব ও কৃৎ-তদ্ধিত প্রত্যয় প্রভৃতির উপযুক্ত জ্ঞান হলে বর্ণাশুদ্ধির সম্ভাবনা অনেকটা কমে যায়।
(iv) শুদ্ধ বর্ণবিন্যাসে সাহায্য করে।
(v) যতিচ্ছেদ বা বিরতিচিহ্নের যথাযথ জ্ঞান হয়।
(vi)সন্ধি-সমাস-কারক-বিভক্তির জ্ঞান হয়।
(vii) ছন্দবিধির জ্ঞান হয়।
(viii) বিশেষ বিশেষ জটিল ক্ষেত্রে বাক্যবিশ্লেষণ পূর্ণ অর্থগ্রহণ সহায়ক হয়।
(ix) বাগ্ধারা ও বিশিষ্টার্থক শব্দের প্রয়োগ ভাষাকে সমৃদ্ধ করে।
(x) উচ্চারণের জ্ঞানবৃদ্ধি ঘটে।
এবার আরো একটি জরুরি বিষয় জানা দরবার। তা হল—বাংলা বানান।
‘বর্ণ’ ধাতুর ওপর অনট প্রত্যয় যোগ করে গঠিত হয় বর্ণন। তার থেকে বানান। বানান শব্দের অর্থ হল বর্ণবিন্যাস করে যে শব্দ গঠিত হয়, তাই বর্ণনা করা। কোনো শব্দের অর্থ হল তার প্রাণ, আর বানান হল তার দেহ।
সাধারণভাবে ভাষার দুটি রূপ প্রচলিত—লেখ্যভাষা ও কথ্যভাষা। কথ্যভাষার মধ্যে ভুল ধরা পড়ার সম্ভাবনা কম, তবে লেখ্যভাষায় ভুল ত্রুটি ধরা পড়ে। কথ্যভাষার সাহায্যে উপস্থিত ব্যক্তির নিকট মনোভাব প্রকাশ করি, কিন্তু লেখ্যভাষাতেই আমাদের ভাবের আদান প্রদান চলে। তাই লেখ্যভাষাই হল’ আমাদের ভাবনাচিন্তার প্রতীক। তাই বানান ভুল সমস্যার সমাধান এতটা গভীরে গিয়ে আমাদের দেখতে হয়।
বানান ভুলের কারণ ঃ
১। পরিবেশগত কারণ :
(ক) সামাজিক পরিবেশ ঃ আমরা যেদিকে তাকাই সেদিকে ভুলের সমারোহ। হাটে-বাজারে মাঠে-ঘাটে, গাড়িতে, নানা বিজ্ঞাপনে, যাত্রা-সিনেমা-থিয়েটারের প্রচারপত্রে, এমনকি রাজনৈতিক দলের পোস্টারগুলিতেও বানান ভুলের বিচিত্র সমারোহ দেখতে পাই। এই বানানগুলি দেখে দেখে শিক্ষার্থীরা অভ্যস্ত হয়ে পড়ে ও লেখ্যভাষায় তাই প্রয়োগ করে। যেমন
—দায়িত্ব লেখা হচ্ছে ‘দাইত্ব’, সুশোভন লেখা হচ্ছে ‘সুসোভন’ রূপে।
(খ) শিক্ষকের লেখায় বানান ভুল ঃ শিক্ষকদের লেখায় বানান ভুল ছাত্রদের বিশেষভাবে প্রভাবিত করে। তাই শিক্ষকদের উচিৎ বোর্ডে লেখার সময় যথেষ্ট সাবধানতা অবলম্বন করা।
(গ) পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণপ্রমাদ ও অনুকরণ ঃ পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ প্রমাদ শিক্ষার্থীদের অত্যন্ত ক্ষতি করে। বইতে বানান ভুল থাকতে পারে—এ কথা তারা মানতে চায় না। অতএব অত্যন্ত সরল বিশ্বাসে ও আন্তরিক নিষ্ঠার সঙ্গে তারা পাঠ্যপুস্তকের লেখা বানান অনুকরণ করে ও তাতেই অভ্যস্ত হয়।
(ঘ) আঞ্চলিকতার প্রভাব ঃ অনেকে ‘ড়’ ও ‘র’-এর পার্থক্য ঠিক মতো ব্যবহার করেন না। যেমন – ‘বই পড়েন’
হয়ে যায় ‘বই পরেন’। এতে শিক্ষার্থীরা দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে অনেকে সময় ভুল বানানে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে।
২। মনস্তাত্তিক কারণ :
(ক) আগ্রহের অভাব: শিক্ষার্থীদের জোর করে শৈশবে বানান শেখানো না হলে বড়ো হয়ে সে বানান শেখার প্রতি আগ্রহ বোধ করে না। শিক্ষার্থীদের বানান শেখার প্রতি নজর দিতে হবে ও যাতে তারা বানান লিখতে আগ্রহী হয় তার চেষ্টা করতে হবে। নানা কথাবার্তার ফাঁকে ফাঁকে তাদের চারিদিকের নানা জিনিসের বানান বলতে বলা হবে—তাতে তারা বানান সম্পর্কে আগ্রহী ও দক্ষ হয়ে উঠবে।
(খ) শ্রদ্ধা ও মনোযোগের অভাব : বানান শেখার সময় বিশেষ মনোযোগী না হলে বানান শেখা সার্থক হয় না। বাংলা ভাষা ভালোভাবে আয়ত্ত করা দরকার বা বাংলা বানান ভালোভাবে শেখা দরকার অধিকাংশ অভিভাবকই এ কথা মনে করেন না। এমনিই হয়ে যাবে এমন একটি ভাব ছাত্রদের ও অভিভাবকদের মধ্যে থাকে বলেই ছাত্ররা বানান প্রভৃতি পঠনে আগ্রহ বোধ করেন না। গভীর মনোযোগ ও শ্রদ্ধা নিয়ে বানান পাঠে ছাত্রদের উৎসাহী করতে হবে।
(গ) বানান না লিখে মুখস্থ করা : বানানকে খাতায় লিখে লিখে মুখস্থ না করলে তা আয়ত্ত হবার নয়।
(ঘ) মানসিক চাঞ্চল্য: হঠাৎ কোনো কারণে মানসিক বিক্ষোভ দেখা দিলে মানসিক অস্থিরতা সৃষ্টি হয়, তার ফলে জানা বানানও অনেক সময় ভুল হয়ে যায়। তাই কোনো কিছু লেখায় সময় মানসিক স্থিরতা অবলম্বন ধরা আবশ্যক।
৩। ভাষাতাত্তিক কারণ :
(ক) বর্নমালাজনিত সমস্যা :
(i) বাংলা বর্ণমালার সংখ্যাধিক্য ঃ সংস্কৃতে ১৬টি স্বরবর্ণ ও ব্যঞ্জনবর্ণ ৩৪টি। ইংরেজি ভাষায় বর্ণের সংখ্যা মাত্র ২৬টি। বাংলা বর্ণমালায় স্বরবর্ণগুলি হল ঃ অ, আ, ই, ঈ, উ, ঊ, ঋ, এ, ঐ, ও, ঔ। এবং ব্যঞ্জনবর্ণ আছে : ক, খ, গ, গ, ঘ, ঙ, চ, ছ, জ, ঝ, ঞ, ট, ঠ, ড, ঢ, ণ, ত, থ, দ, ধ, ন, প, ক, ব, ভ, ম, থ, র, ল, ব, শ, ষ, স, হ, ড়, ঢ়, য়। ৎ, ং, ঃ,
এছাড়াও বিভিন্ন যুক্তবর্ণও আছে। বাংলা বর্ণমালায় এই সংখ্যাধিক্য বাংলা বানানে বিশেষ জটিলতা সৃষ্টি করেছে।
(ii) যুক্তাক্ষর সমস্যা ঃ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই যুক্ত বর্ণগুলি থেকে মূল বর্ণগুলি সনাক্ত করা যায় না। যেমন – ক্ + ষ =ক্ষ, হ + ম = ত্ম, ক্ + ত = ক্ত, স্ স্ + থ = স্থ, ঞ্ + চ = ঞ্চ। কিন্তু ভ্ + র = ভ্র, ক্ + র = ত্রু, ত্ +থ =
খ। অধিকাংশ যুক্তবর্ণের রেখার গঠন জটিল। তাই বহু ক্ষেত্রেই একটি শিক্ষার্থীরা সহজে আয়ত্ত করতে পারে না ও বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়। যেমন, ক্ + ক = ক্ক (মক্কা); কিন্তু ক্ + ব = ক্ব(পক্ক)। আবার চক্র (ক্- য়ে র-ফলা) যেমন – বক্র ; কিন্তু ত্র (ত্ = এ র ফলা) যেমন – শত্রু। উ ও ঊ – কার চিহ্নের রূপ ঃ বন্ধু ; শত্রু (উ-কার)। কূপ ; রূপ (ঊ-কার)
(iii) সম্মোচ্চারিত বর্ণ জনিত সমস্যা ঃ বাংলা বর্ণমালায় অনেকগুলি বর্ণের উচ্চারণ প্রায় একই। আনুনাসিক বর্ণগুলির (ঙ, ঞ, ণ, ন, ম, ং) উচ্চারণ প্রায় কাছাকাছি। সংস্কৃতে এদের উচ্চারণে পার্থক্য থাকলেও বাংলায় এর কোনো পার্থক্য ধরা হয় না। ব্যঞ্জনবর্ণে দুটি ‘ব’ (বর্গীয় ‘ব’ এবং অন্তস্থ ‘ব’) রাখা হলেও দ্বিতীয় ‘ব’ –টির উচ্চারণ বাংলায় নেই। তালব্য ‘শ’, মূর্ধন্য ‘ষ’ ও দন্ত্য ‘স’ -এর সঠিক উচ্চারণ প্রায় অনেকেরই অজানা। আবার র, ড়, ঢ়-উচ্চারণ খুব কাছাকাছি। বর্গীয় ‘জ’ ও অন্তস্থ ‘য’ -এর অবস্থা একই। এই সমোচ্চারিত বর্ণগুলি বাংলা ব্যাকরণে বিপর্যয় ঘটায়।
(iv) বাংলা বর্ণমালা বৈজ্ঞানিক-ভাবে সজ্জিতঃ স্বরবর্ণ ও ব্যঞ্জনবর্ণের বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিভাগ হ্রস্বস্বর ও দীর্ঘস্বর, অল্পপ্রাণ ও মহাপ্রাণ, ঘোষ ও অঘোষ বর্ণ উচ্চারণ তত্ত্বের সূক্ষ্ণ তাৎপর্যের ভিত্তিতে বিন্যস্ত। উচ্চারণের এই সূক্ষ্ণ পার্থক্য বাংলা শব্দে প্রতিফলিত হয় না। কোন্টিতে ‘ই’ হবে, বা কোনটিতে ‘ঈ’-হবে তার বিচারের কোনো পথই নেই। তাই বাংলা বানান শ্রুতিনির্ভর না হয়ে স্মৃতি নির্ভর হয়ে পড়েছে।
(খ) ভাষার প্রয়োগরীতি সংক্রান্ত বানান সমস্যা :
(i) বাংলা একটি মিশ্র ভাষা : ‘শ্রবণ’ একটি তৎসম শব্দ, কিন্তু তার তদ্ভব রূপটি হল ‘শোনা’। এখানে দন্ত্য ন’ ও মূর্ধন্য ‘ণ’ -এর পার্থক্য তৈরি হয়ে গেল।
(ii) সমরূপ শব্দ (Homonym) : উচ্চারণে ও বানানে সাদৃশ্য থাকলেও একটি শব্দের বহু রকম অর্থ হতে পারে। এই ধরণের শব্দকে সমরূপ শব্দ বলে। যেমন—বই-পুস্তক ; বই—ছাড়া, ব্যতীত । ডাল -গাছের শাখা’ ডাল -তরকারি বিশেষ।
(iii) সমোচ্চারিত ভিন্নার্থক শব্দ বা সমধ্বনি শব্দ : অংশ = ভাগ ; অংস = স্কন্ধ। শব = মৃতদেহ ; সব = সকল।
(iv) সাধুভাষা ও চলিতভাষার প্রয়োগজনিত সমস্যা : সাধুতে ‘পূজা’, চলিতে পুজা/ পুজো ; সাধুতে ‘ধূলি’, কিন্তু চলিতে ‘ধুলো’ হয়।
(v) সন্ধি সমাস প্রত্যয় ব্যাপারে অজ্ঞতা :
সন্ধি ঃ ‘জ্যোতিরিন্দ্র’—কে জ্যোতিন্দ্র বলি।
সমাস : ‘কালিদাস,’—কে। কালীদাস লিখি।
প্রত্যয় ঃ লক্ষণীয়’—কে ‘লক্ষ্যনীয়’ লিখি ; ‘উপলক্ষ’-কে লিখি ‘উপলক্ষ্য’।
(গ) উচ্চারণ সমস্যা :
(i) যুক্তাক্ষরের সঠিক উচ্চারণের অসুবিধা ঃ লক্ষ্ণী, লিখতে গিয়ে হয়ে যায় ‘লক্ষী’। ‘লক্ষণ’ লিখতে গিয়ে হয়ে যায় লক্ষ্মণ। ‘সম্মান’ হয়ে যায় ‘সন্মান’।
(ii) পারিপার্শ্বিক পরিবেশ ও আঞ্চলিকতার দ্বারা আক্রান্ত বানানঃ মধু > মোধু; লুচি > নুচি ; দেশ > দ্যাশ প্রভৃতি।
(iv) (চন্দ্রবিন্দু)-র আগমন : হাসপাতাল > হাঁসপাতাল।
বাংলা পেডাগগি থেকে কিছু প্রশ্ন ও উত্তর
১। ভাষার দক্ষতা হল—
(ক) মানসিক শক্তি
(খ) চৰ্চিত শক্তি
(গ) কল্পনা শক্তি
২। কাব্য রচনা একটি
(ক) ভাব শক্তি
(খ) অনুমান শক্তি
(গ) ভাষা শক্তি
৩। সাহিত্য একটি—
(ক) ভাবের প্রকাশ
(খ) জীবনের বৃত্তি
(গ) ভাষার বাঙময়তা
৪। লেখ্য ভাষা হল—
(ক) ঐতিহ্য
(খ) সাহিত্য
(গ) কথভাষার লিখিত বয়ান
৫। আদর্শ বাংলা কথ্য ভাষাটি হল—
(ক) বর্ধমানের
(খ) মেদিনীপুরের
(গ) উত্তর দিনাজপুরের
৬৷ ‘বিতর্ক’ হওয়া উচিৎ
(ক) কোনো বিবাদের নিষ্পত্তির জন্য
(খ) বাচনভক্তির তীক্ষ্ণতা বাড়াতে
(গ)বাচনভঙ্গি যেন যুক্তিপূর্ণ হয়
৭। আমাদের সংবিধানে ভাষা হল—
(ক) বহু ও বিচিত্র
(খ) মৌলিক অধিকার
(গ) অনির্ণীত ও অমীমাংসিত সত্তা
৮। ভাষার শেখার একটি প্রকৃষ্ট মাধ্যম –
(ক) সমাজে মেলামেশা
(খ) আড্ডা মারা
(গ) সাহিত্য গ্রন্থ পাঠ
৯। ভাষার উন্নতি মানে—
(ক) সমাজের উন্নতি
(খ) বাণিজ্যের উন্নতি
(গ) ব্যক্তির উন্নতি
১০। লেখার আগ্রহ বাড়ালে—
(ক) ভাষা আরো মসৃণ হবে
(খ) লাবণ্যময় হবে
(গ) সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন হবে।
উত্তর : ১. খ , ২. গ, ৩.গ, ৪. গ ৫. ক, ৬. গ, ৭. খ, ৮. গ, ৯. গ, ১০. গ
This page contains: Pedagogy Questions and Answers, Pedagogy in Bengali, Pedagogy in Bangla, Pedagogy MCQ, Pedagogy for TET, Pedagogy for Primary TET, বাংলা পেডাগগি প্রশ্ন ও উত্তর, প্রশ্নোত্তরে বাংলা পেডাগগি।
Visited 27 times, 1 visit(s) today