বৃষ্টির জল সংরক্ষণ
Rain Water Harvesting | Environmental Studies
Rain Water Harvesting: আজ আমরা পরিবেশ বিষয় এর একটি গুরুত্বপূর্ণ টপিক বৃষ্টির জল সম্পর্কে কিছু তথ্য আপনাদের সাথে শেয়ার করবো । এই টপিক টি আগামী WB TET, WB Upper Primary TET, CTET বা প্রাইমারি টেট পরীক্ষার জন্য খুবই উপযোগী । যারা পরিবেশ বিষয়ে Rain Water Harvesting Project করতে চায় তাদের ও এই তথ্যগুলি কাজে আসবে ।
বৃষ্টির জল সংরক্ষণ (Rain Water Harvesting) | পরিবেশ
কী করে বৃষ্টির জল সংরক্ষণ করবেন:
বৃষ্টির জল সংরক্ষণ করার যে কোনও ব্যবস্থার তিনটি দিক রয়েছে। জল ধরা, জল বহন করা ও জল সঞ্চয় করা। বৃষ্টির জল সংরক্ষণের দু’ধরনের ব্যবস্থা আছে।
বাড়ির কাজের প্রয়োজনে ছাদ থেকে বৃষ্টির জল সংগ্রহ করার ব্যবস্থা
কৃষিতে বাড়তি সেচের জন্য মাঠে বা কাছাকাছি জায়গায় জল ধরে রাখার ব্যবস্থা।
বৃষ্টির জল সংরক্ষণ ব্যবস্থার ছ’টি মৌলিক উপাদান :
- ক্যাচমেন্ট : ছাদ বা যেখানে জল ধরার ব্যবস্থা।
- পরিবহন : ছাদ বা জল ধরা হয় সেখান থেকে মজুত করার জায়গায় জল নিয়ে যাওয়ার জন্য চ্যানেল বা পাইপ।
- ছাদ বা জল ধরার জায়গা পরিষ্কার করা : যাতে বৃষ্টির জলের সঙ্গে নোংরা না থাকে তার জন্য জল ফিল্টার করতে ‘ফার্স্ট ফ্লাশ ডাইভার্টার’ ব্যবস্থা
- জল সঞ্চয় : কীটমুক্ত ট্যাঙ্ক বা সিস্টার্ন যেখানে জল সংরক্ষণ করে রাখা যাবে।
- পরিশ্রুত করা : ফিল্টার করা, ওজোন ও ইউভি আলোর ব্যবহার যাতে সংগৃহীত বৃষ্টির জল পানীয় হিসাবে ব্যবহার করা যায়।
- বণ্টন : যে ব্যবস্থার মাধ্যমে বৃষ্টির জল বণ্টন করা করা হয়। সচরাচর এর জন্য ছোট পাম্প ও প্রেশার ট্যাঙ্ক ব্যবহার করা হয়।
এ ছাড়াও বৃষ্টির জল সংরক্ষণ করার জন্য পুকুর কাটার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। পশ্চিমবঙ্গ জলমাতৃক রাজ্য। এখানে খাল বিল ও পুকুর যথেষ্ট রয়েছে। কিন্তু পুকুর বা খাল বিলগুলি সংরক্ষণের অভাবে মজে যেতে বসেছে। সেগুলিকে সংরক্ষণ করতে হলে অবিলম্বে পুকুরগুলির সংস্কার করা প্রয়োজন। আশার কথা হল পশ্চিমবঙ্গ সরকার অত্যন্ত পূর্বেই এই বিষয়টি বুঝেছিল এবং এ সম্পর্কিত ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছিল। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ২০১১ সালে‘ জল ধরো জল ভরো’ নামক একটি কর্মসূচি গ্রহণ করেন। যার মূল কথা হল যে কোনও উপায়ে বৃষ্টির জল সংরক্ষণ করা এবং তা ব্যবহারের ব্যবস্থা করা। এ জন্য প্রতিটি ব্লকে টাকা বরাদ্দের ব্যবস্থা করা হয়। আগামী দিনে পশ্চিমবঙ্গ সরকার এটিকে মডেল প্রজেক্ট হিসবে তুলে ধরতে চায়।
বৃষ্টির জল সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তাঃ-
জল একটি প্রাকৃতিক সম্পদ এবং এর সরবরাহ প্রকৃতির দানের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু প্রাকৃতিক জলের জোগান নির্দিষ্ট। বৃষ্টির জলকে সংরক্ষিত রেখে পরে কার্যকর ভাবে তাকে যখন পুনর্ব্যবহার করা হয়, সেই প্রক্রিয়াকে বৃষ্টির জল সংরক্ষণ (Rainwater Harvesting) বলে।
যে সমস্ত কারণে বৃষ্টির জল সংরক্ষণের প্রয়োজন, সেগুলি হলোঃ-
১) শুষ্ক ঋতুতে জলের যোগানঃ- আর্দ্র ঋতুর সময় বা বর্ষাকালে বৃষ্টির জল সংরক্ষণ করলে পরবর্তীকালে অর্থাৎ গ্রীষ্মকালীন বা শুষ্ক ঋতুতে জলের সমস্যা লাঘব হয়।
২) পরিবেশ সংরক্ষণ ও বাস্তুতন্ত্র রক্ষায়ঃ- পরিবেশ সংরক্ষণ ও বাস্তুতন্ত্র রক্ষায় প্রকৃতির জলভান্ডার সমৃদ্ধ রাখা প্রয়োজন। শুধু প্রকল্প গ্রহণই নয়, জনসচেতনতা বৃদ্ধিরও প্রয়োজন রয়েছে। সেই ক্ষেত্রে বৃষ্টির জল সংরক্ষণের মাধ্যমে পরিবেশ এবং বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য বজায় রাখা যেতে পারে।
৩) ভৌমজলস্তরের ভারসাম্য রক্ষাঃ- পৃথিবীর মোট ভূপৃষ্ঠীয় ক্ষেত্রফলের দুই তৃতীয়াংশেরও বেশি জলভাগের অন্তর্গত। কিন্তু পৃথিবীর এই বিপুল জলরাশির ৯৭.৫% লবণাক্ত জল (Salt Water) এবং মাত্র ২.৫% সুপেয় জল বা মিষ্টি জল (Fresh Water)। আবার এই ২.৫% সুপেয় জলের ২% ই মেরু ও উচ্চ পার্বত্য অঞ্চলে হিমবাহ রূপে জমাটবদ্ধ অবস্থায় সঞ্চিত রয়েছে এবং মাত্র ০.৫% ই আমরা ব্যবহার্য পরিমন্ডলে পেয়ে থাকি। সুতরাং একথা বলার অপেক্ষা রাখে না, ভৌমজল সঞ্চয় ও সংরক্ষণে এবং জলাভাব দূরীকরণে বৃষ্টির জল সংরক্ষণ কতখানি প্রয়োজনীয়।
৪) নিম্ন জলধারণ ক্ষমতাযুক্ত মৃত্তিকাঞ্চল ও শহরাঞ্চলে জলের যোগানঃ- যেসব অঞ্চলে (বিশেষত শহরাঞ্চলে) মৃত্তিকায় জলধারন ক্ষমতা নেই বা খুবই কম, সেইসব অঞ্চলে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির মাধ্যমে ছাদে বৃষ্টির জল ধরে রেখে তা ভূপৃষ্ঠস্থ জলাধারে প্রেরণ করে ভৌমজলের সঞ্চয়বৃদ্ধি করা সম্ভব। শহরাঞ্চলে এভাবে বৃষ্টির জল সংরক্ষণ করলে রাস্তাঘাটে জল জমার সমস্যা লাঘব হবে এবং কিছুটা হলেও জলের সমস্যা দূর হবে।
৫) গৃহস্থালির প্রয়োজনীয় জলের সহজলভ্য যোগানঃ- সংরক্ষিত বৃষ্টির জল গৃহস্থালির প্রয়োজনে এবং এই সংরক্ষিত জলকে পরিশুদ্ধ করে জলকে পানীয়জল হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে।
৬) কৃষিকাজে প্রয়োজনীয় জলের সরবরাহঃ- বৃষ্টির জল সংরক্ষন করলে পরবর্তীকালে কৃষকদের কাছেই সংরক্ষিত জল থাকায় ভবিষ্যতে জলসেচ সহ নানাবিধ প্রয়োজনে কৃষক তা ব্যবহার করতে পারেন।
এছাড়াও বৃষ্টির জল সংরক্ষণের বেশ কিছু সুবিধা হলোঃ*
*(১) জল সরবরাহের খরচ হ্রাস।
*(২) বন্যা প্রতিরোধে সাহায্য।
*(৩) মৃত্তিকার উপরিস্তরের ক্ষয় হ্রাস।
*(৪) শুষ্ক ঋতুতে বা অসময়ে জলের জোগান।
*(৫) উদ্ভিদ ও কৃষিকাজের উন্নতি।
*(৬) খরা দূরীকরণে সহায়তা
Visited 11 times, 1 visit(s) today